নুরনবী মিয়া,সময় সংবাদ বিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক, কুড়িগ্রাম: কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন ঐতিহ্য উড়ুন-ঢেকি। যান্ত্রীকায়নের যুগে অনেকটাই কমে গেছে এসবের ব্যাবহার। ধান,গম, ভুট্টা ভাঙ্গা, মসলা পেষা, বিভিন্ন দানা জাতীয় শস্য ভাঙ্গানোর জন্য গ্রামাঞ্চলে এক সসময় জনপ্রিয় ছিল ঢেঁকি ও উড়ুন। কিন্তু আধুনিকায়নের ফলে এখন বিলুপ্তপ্রায়।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সাবেক ছিটমহল দাসিয়ার ছড়া ঘেষা ইন্দিরারপাড় এলাকার সাদের আলী দীর্ঘদিন ধরে উড়ুন, ঢেঁকি তৈরি করে হাট-বাজারে বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন।
তিনি জানান, মাঝেমধ্যে দু-একটি উড়ুনের ক্রেতা আসে। আর ঢেঁকির ক্রেতা নাই। ববর্তমানে একটি উড়ুন ১০০০-১৫০০ টাকা বিক্রি হয়। এখন মানুষ মেশিনের সাহায্যে দ্রুত সময়ে সবকিছু ভাঙ্গতে পারে। আগের মতো উড়ুন আর ঢেঁকির কদর নাই।
কাঠের গুড়িতে গর্ত করে তৈরি করা এই বস্তুুটিকে অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন; উড়ুন, করাল, উলকি ইত্যাদি। ধান থেকে তুষ(খোসা) ছড়িয়ে চাউল, হলুদ, মরিচ ও বিভিন্ন মসলা গুঁড়া করা। ডাল ভাঙ্গা, চাউল, গম ভেঙ্গে আটা তৈরিতে ব্যাবহার করা হয়। ঢেঁকি পায়ে ভর দিয়ে, আর উড়ুন এর জন্য একটি গাইন(গ্রামের ভাষা) দিয়ে আঘাত করলে ধান বা অন্যান্য শস্য সামগ্রি সহজে ভেঙ্গে যায়। গ্রামের কিছু বাড়িতে এখনও উড়ুন-ঢেকির ব্যাবহার দেখা যায়। নবান্নের পিঠা বানানোর ধুম পড়ে গেলে ঢেকি বা উড়ুন ব্যবহার করেই আটা তৈরি করেন অনেকে। তাছাড়াও গ্রামাঞ্চলের বিয়েবাড়ি, কুলখানির মত অনুষ্ঠানে মশলা পিষতে দেখা যায়।
উড়ুন-ঢেঁকি’র বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলবাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোরশেদ আলম ও মিয়াপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, ঢেঁকি ও উড়ুন এক সময় ছিল ধনী আভিজাত্যের প্রতীক। এখন বিভিন্ন যান্ত্রিক পদ্ধতি আসার ফলে এসব প্রচীন ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে।